মৃত্যক্ষুধা উপন্যাসের শিল্পমূল্য বিচার কর।

মৃত্যক্ষুধা উপন্যাসের শিল্পমূল্য বিচার কর।

কাজী নজরুল ইসলামের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্মটি হচ্ছে 'মৃত্যক্ষুধা '(১৯৩০) উপন্যাস। বিষয়বস্তুর গভীরতা,কাহিনীর সুবিন্যাস্ত নির্মাণ কৌশল, চরিত্র সৃষ্টির দক্ষতা, ভাষাশৈলীর ব্যবহারে, দৃষ্টিকোণ প্রয়োগেও পরিচর্যার রূপায়ণ, সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির বিশেষ খণ্ডচিত্র অঙ্কন প্রভৃতিক্ষেত্রে।নজরুলের প্রতিভা নিরূপণের মাধ্যমে মৃত্যুক্ষুধা রচনার বিষয়-বিন্যাস ও শিল্প-সুষমাগত মান নির্ণয় করা সম্ভব।

মৃত্যক্ষুধা উপন্যাসের শিল্পমূল্য বিচার কর।


মৃত্যক্ষুধা উপন্যাসের কাহিনি বিন্যাস

মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের ঘটনাংশ আদি-মধ্য-অন্ত্যযুক্ত-সমগ্র। এর কাহিনি বিন্যাসরীতি প্রচলিত উপন্যাসের ধারানুবর্তী অবয়ব-সংগঠনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে ‘মৃত্যু-ক্ষুধা’ উপন্যাসে স্পষ্টত দুটো পর্ব লক্ষ করা যায়। কৃষ্ণনগরের চাঁদ সড়কের পাশে একটি দরিদ্র মুসলমান পরিবার ক্ষুধার তাড়নায় কিভাবে ধুঁকে মরছে এবং এ-ঘরেরই এক বিধবা বৌ ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্যে ধর্মান্তরিত হয়ে  অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পেয়েছে, তার নিপুণ এবং নিগূঢ় প্রকাশ ঘটেছে আলোচ্য উপন্যাসে।


বস্তিবাসীদের দৈনন্দিতার বর্ণনা দিয়ে উপন্যাসটির পট উন্মোচিত হয়েছে।একটি সুন্দর পরিবার সর্বগ্রাসী ক্ষুধার তাড়নায় কিভাবে বিপন্ন হয়ে গেল উপন্যাসের প্রথমার্ধের কাহিনীতে আমরা সে-চিত্রই প্রাই।আর দ্বিতীয় অংশের কাহিনীতে প্রাধান্য পেয়েছে নিরন্ন-নিপীড়িত মানুষ আর সংক্ষুব্ধ কলকাতার জীবনচিত্র।ক্ষুধার হাত থেকে বাঁচার জন্যে মানুষের কঠিন সংগ্রামের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।

উপন্যাসের দ্বিতীয়ার্ধে আছে বিপ্লবের কথা, সাম্যবাদী সমাজের কথা, দেশমাতার শৃঙ্খল মুক্তির ব্রতে জীবনকে তুচ্ছ ভেবে আত্মোৎসর্গের কথা, দেশপ্রেমিক সর্বহারা দলের অসীম সংকল্পের কথা। দ্বিতীয়ার্ধের কাহিনীর নায়ক আনসার, যে প্রথম জীবনে কংগ্রেসের রাজনীতিতে বিশ্বাস থাকলেও অবশেষে বুঝেছিল যে 'চরকায় সুতো কেটে দেশকে স্বাধীন করা যায় না।তাই সে কৃষ্ণনগরে চলে আসে শ্রমিক সংঘ সংগঠনের আশায়।এবং এক সময় কমিউনিস্ট মতবাদ প্রচারের অভিযোগে ব্রিটিশ সরকারের কারাগারে তিলে তিলে ধুঁকে আনসারের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে উপন্যাসের দ্বিতীয়ার্ধের কাহিনী সমাপ্ত হয়।


উপন্যাসে এই দুটি স্রোতের মধ্যে যােগসূত্র রক্ষা করেছে একটি মাত্র চরিত্র-প্যাঁকালের ভাবি বিধবা-মেজবৌ। কিন্তু যে কেন্দ্রানুগ শক্তি উপন্যাসের সকল কাহিনীকে একটি ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করে, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, মেজবৌ তা পালন করতে পারেনি সে-কেন্দ্রানুগ শক্তির ভূমিকা। তবে উপন্যাসে নজরুল এই দুটো ভিন্নধর্মী কাহিনীর যে সংমিশ্রণ করেছেন, তা একই মানস-উদ্ভূত এবং একই প্রেরণা-সম্ভুত। মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ উপকাহিনি নেই। তবে কুশি-প্যাঁকালে প্রেম কাহিনিকে ঘিরে দুটো পরিচ্ছেদ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেটি প্রকৃত প্রস্তাবে মূল কাহিনিস্রোতের মধ্যে থেকেই বর্ণিত হয়েছে।


মৃত্যক্ষুধা উপন্যাসের চরিত্র বিশ্লেষণ।

উপন্যাসের ঘটনা বা লেখকের অন্বিষ্ট বক্তব্য বহন করে পরিণতির অভিমুখে এগিয়ে নিতে চরিত্রের ভূমিকা অবশ্যস্বীকার্য।তাই উপন্যাসে চরিত্র পরিকল্পনায় ঔপন্যাসিককে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হয়।


মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের চরিত্রগত সাফল্যে নজরুলের কৃতিত্ব অনস্বীকার্য । উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্র অবস্থান অনুযায়ী বাস্তবানুগ ও হৃদয়স্পর্শী । উপন্যাসের প্রথম অংশে মেজো বৌ-এর সমান্তরালে গড়ে উঠেছে আরেকটি চরিত্র প্যাকালে ।বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক অবস্থার চাপে মুমূর্ষু-বিপন্ন যুবসমাজের বেদনা-যন্ত্রণা নজরুলকে প্রবলভাবে আলোড়িত করত এবং সে-সূত্রেই এ-উপন্যাসে প্যাঁকালে চরিত্রের উজ্জ্বল নির্মিতি।পিতৃহীন, একান্নবর্তী পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি প্যাঁকালে রাজমিস্ত্রির কাজ করার পাশাপাশি টাউনে বাবুদের শখের থিয়েটারে নাচ-গান করে। চরম দারিদ্র্যের মধ্যেও রোম্যান্টিকতা তার স্বভাবসিদ্ধ । কুর্শিকে ভালোবেসে সুখী নবজীবনের স্বপ্ন দেখে। আয়নার অভাবে থালায় জল ঢেলে রৌদ্রে বসে সিঁথি কেটে চুল আচড়ায় ।

মৃত্যক্ষুধা উপন্যাসের বিষয়বস্তু।

প্যাকালে যেমন অনুভূতিপ্রবণ, তেমনি ঈর্ষাপরায়ণ চরিত্র। তাই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি কুর্শির সামান্যতম করুণা কি সুব্যবহার তাকে প্রতিহিংসাপরায়ণ করে তোলে এবং কন্নিকের আঘাতে কুর্শিকে করে তোলে রক্তাক্ত। নজরুল ইসলাম প্যাঁকালেকে যথার্থ অর্থেই রক্ত-মাংসময় এক জীবন্ত মানুষ হিসেবে নির্মাণ করেছেন। এ-চরিত্র নির্মাণে নজরুলের ব্যক্তি-অভিজ্ঞতার ছায়াপাত ঘটেছে। প্যাকালে তার বাবুয়ানা, থিয়েটার, গান, জীবন ও জীবিকার কঠোরতর পথ-পরিক্রমাসহ যে স্বয়ং দুখু মিঞা তা বুঝতে কষ্ট হয় না।মূলত প্যাকালে চরিত্রটি উপন্যাসে একমুখী; তার চরিত্রে সক্রিয়তা থাকলেও কোনো বিবর্তন বা অন্তর্দ্বন্দ্ব গড়ে ওঠেনি।


নজরুল আপন মানস-ভাবনার অনুগামী করে নির্মাণ করেছেন 'মৃত্যু-ক্ষুধার' অন্যতম পুরুষ চরিত্র আনসারকে। উদ্দাম জীবন-পিপাসা রাজনীতি-সচেতন এবং দ্যুতিময় ব্যক্তিত্বের অধিকারী নজরুল আলোচ্য উপন্যাসে যেন আনসার হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছেন।  আনসার এ উপন্যাসের নায়ক। তার চরিত্র-ব্যক্তিত্ব-কর্মধারা-আচার-আচরণ-উচ্চারণ—সবকিছুই আবেগ এবং ভাবালুতা-নিয়ন্ত্রিত।


উপন্যাসে আনসারের উপস্থিতি অনেকটা আকস্মিক, অস্বাভাবিক এবং অসার্থক–ঔপন্যাসিকের উদ্দেশ্য আর বক্তব্য প্রকাশের মাধ্যম হিসেবেই তাকে কাহিনীর মধ্যস্রোতে জোর করে আনা হয়েছে। ফলে চরিত্রটি হয়ে পড়েছে কৃত্রিম এবং তার উপস্থিতি থেকেই কাহিনী হয়ে পড়েছে সংহতিহীন, যেন উপকাহিনী ভারাক্রান্ত উপন্যাসের সমাপ্তিতে তার প্রতি মেজবৌয়ের অব্যক্ত দুর্বলতা তাকে নায়ক হতে সাহায্য করেছে নিঃসন্দেহে; কিন্তু নায়ক হওয়ার মতো অনেক মৌলিক বৈশিষ্ট্যই নেই তার চরিত্রে, পারেনি সে সকল কাহিনীকে সুদৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে।আনসার সংগ্রামী হলেও জীবনরস-বিমুখ নয়; সে কৌতুকপ্রিয়, হাস্যোচ্ছল এবং জীবনানন্দে ভরপুর। 


এছাড়াও অপ্রধান এবং মধ্যবর্তী চরিত্র নির্মাণেও নজরুল ইসলাম সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। কৃষ্ণনগরের চাঁদ সড়ক এলাকায় দীর্ঘদিন অবস্থানের ফলে নজরুল যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, এ-সব চরিত্রের উপাদানপুঞ্জ সেই অভিজ্ঞতা লোক থেকেই আহৃত হয়েছে।রুবি,প্যাকালের মা ও হিড়িম্বা, বড়বৌ, সেজবৌ, তাদের ক্ষুধা-পীড়িত সন্তান-সন্ততি, স্বামী-পরিত্যক্তা পাঁচি, প্রেম-প্রত্যাশী কুর্শি, বিবাহলিপ্স ঘিয়াসুদ্দীন ঘাসু মিয়া, লতিফা, নাজির হোসেন, প্যাঁকালের প্রতিদ্বন্দ্বী রোতে, মোড়ল-মৌলবী, খ্রিস্টান পাদ্রী, মিস জোন্স—এসব চরিত্র-সৃষ্টিতে নজরুলের সতর্কর্তা, প্রযত্ন এবং সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ-ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়।


মৃত্যক্ষুধা উপন্যাসের পরিচর্যারীতি।

উপন্যাসটিতে সর্বজ্ঞ দৃষ্টিকোণ ব্যবহৃত হলেও এ-রীতি তিনি সর্বদা গ্রহণ করেননি। কখনো কখনো কেন্দ্রীয় চরিত্র অথবা গুরুত্বপূর্ণ অপ্রধান চরিত্রের প্রেক্ষণবিন্দু ব্যবহৃত হওয়ায় উপন্যাসের ঘটনাংশে সাধিত হয়েছে। বিস্ময়কর নাটকীয়তা। যেমন :

"মেজো বৌ পাগলের মতো ছুটে গিয়ে মসজিদের সিঁড়ির ওপর – 'সেজনা তো নয়- উপুর হয়ে পড়ে মাথা কুটতে থাকে।…কী প্রার্থনা করে সে-ই জানে। ভিতর থেকে মৌলবী সাহেবের 'তকবির' ধ্বনি ভেসে আসে, 'আল্লাহো আকবার'। মেজো বৌ সিঁড়িতে মাথা ঠেকিয়ে, বলে, 'আল্লাহো আকবার'।"


ওপরের বর্ণাংশের শুরুতে লেখকের সর্বজ্ঞ দৃষ্টিকোণের সাথে পরবর্তী অংশে কেন্দ্রীয় চরিত্র মেজো-বৌ ও অপ্রধান চরিত্র মৌলভি সাহেবের প্রেক্ষণবিন্দু অবলীলায় প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।


নজরুল এ-উপন্যাসে প্রায় ব্যবহার করেছেন বর্ণনাধর্মী, গীতময় ও নাট্যিক পরিচর্যারীতি । গীতময়তার সঞ্চার দেখতে পাই যেমন :

"মাঝে মাঝে মনে হয়—মনে হয় ঠিক না, লোভ হয়—যাবার আগে এই অদ্বিতীয় মনের দ্বিতীয় জনকে দেখে যাই——–জেনে যাই। আমার মরুভূমির ঊর্ধ্বে সাদা মেঘের ছায়া নয়, কালো মেঘের ছায়াঘন মায়া দেখে যাই। ? "


কোনো কোনো সময় নাটকের পাত্র-পাত্রীর মতো সংশ্লিষ্ট চরিত্রসমূহ পারস্পরিক কথোপকথনের মাধ্যমে নাট্যিক পরিচর্যা অনুসৃত হয়েছে।যেমন:

"মেজ-বৌ ইশারায় প্যাকালেকে ডেকে ফিস্ ফিস্ করে বললে, “আচ্ছা বেহুঁশ ডাক্তার ত, রোগীর কাছে তার অবস্থা এমনি করে বলে নাকি?”ডাক্তার  তাড়াতাড়ি তিনি প্যাঁকালেকে ডেকে বললেন, “ওরে তোদের বাড়ী মুরগির বাচ্চা আছে ত? একটু ঝোল ক’রে খাওয়া দেখি। এখখুনি চাঙ্গা হয়ে উঠবে। ভাবিস্নে কিছু ও ভালো হয়ে যাবে খন।”...মেজ-বৌ ডাক্তার শুনতে পায় এমনি জোরেই বলে উঠল, “আখার বাসি ছাইগুলোর কিনিরা হল দেখে।”


‘মৃত্যু-ক্ষুধা' উপন্যাসে নজরুল বিষয় এবং বক্তব্যেই অধিক মনোযোগী ছিলেন; প্রকরণ-পরিচর্যায় তিনি তেমন যত্নশীল বা সতর্ক ছিলেন না। তবুও প্রকরণ-প্রসাধনে, বিশেষত ভাষা-ব্যবহারে, তাঁর সাফল্য ও সিদ্ধি মোটেই অকিঞ্চিৎকর নয়। ভাষা-প্রয়োগে নজরুলের কবিসত্তা সর্বদা অলক্ষ্যে কাজ করছে, ফলে তাঁর উপন্যাসের ভাষায় এসেছে কবিতার লাবণ্য। ‘মৃত্যু-ক্ষুধা' উপন্যাসের ঘটনাংশ সংঘটিত হয়েছে কৃষ্ণনগরে। সুতরাং, সঙ্গত কারণেই, নজরুল সতর্কতার সঙ্গে এ-উপন্যাসে কৃষ্ণনগরের বাকভঙ্গি ব্যবহার করেছে; ফলে চরিত্রের বাস্তবতা হয়েছে অধিকতর বিশ্বাসযোগ্য।প্রাসঙ্গিক বর্ণনাংশ লক্ষণীয়:


"বড় বৌ তেমনি কান্না-দীর্ণ কন্ঠে বলে উঠল, 'বাতি নেই। সব বাহি নিবে গেছে! ঘরে এক ফোঁটা তেল নেই!”


উপন্যাসে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নজরুল প্রচুর পরীক্ষা-নিরাক্ষা করেছেন। মৃত্যুক্ষুধায় একদিকে কথ্য  সাধুরীতির বাংলা শব্দ, অন্যদিকে সংস্কৃত, তদ্ভব-প্রাকৃত, আরবি-ফারসি-ইংরেজি ভাষার শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়।নজরুল এ-উপন্যাসে বাগধারা, লোক ছড়া ও সমাসবদ্ধ শব্দ ব্যবহারেও নিপুণতা প্রদর্শন করেছেন। ফলে উপন্যাসের ভাষিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।


যেমন :"গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া।"(বাগধারা)

"রোগ-শোক-দুঃখ-দারিদ্র্য এই চারটিতে মিলে তেমনি থেঁতলেছে ওকে।" (সমাসবদ্ধ শব্দ)


মৃত্যুক্ষুধার গদ্যে আবেগময় শব্দগুচ্ছের বলিষ্ঠ ব্যবহার ঘটেছে। দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত একসময়ের কংগ্রেসপন্থি আনসার মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে তার একাকী জীবনের দুঃখ-কষ্ট ও মনো যন্ত্রণাকে যা উপন্যাসের গদ্যশৈলীতে বাঙ্ময় হয়ে রূপ লাভ করেছে :


"মানুষের শুধু পরাধীনতারই দুঃখ নাই, অন্যরকম দুঃখও আছে যা অতি গভীর, অতলস্পর্শী। নিখিল-মানবের দুঃখ কেবলই মনকে পীড়িত,বিদ্রোহী করে তোলে, কিন্তু নিজের বেদনা- সে যেন মানুষকে ধেয়ানী সুস্থ করে তোলে। বড়ো মধুর, বড়ো প্রিয় সে দুঃখ"


এছাড়াএ বক্তব্যকে পরিশীলিত, সুষমাময় ও আকর্ষণীয় করার জন্য এবং অর্থের খাতিরে ও দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করার প্রয়োজনে নজরুল এ-উপন্যাসে অজস্র আলংকারিক গদ্য নির্মাণ করেছেন। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি, চিত্রকল্প প্রভৃতির আলংকারিক সৌন্দর্যে  উপন্যাসের ভাষা অপরূপ স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে।উপমা ব্যবহারে লেখক তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন।যেমন উপমা ও উৎপ্রেক্ষার ব্যবহার:


"ঐ দূর ছায়াপথের নীহারিকা-লোকের মতই নারীর মন রহস্যময়।"

" সন্ধ্যার নামাজ, যেন মৃত দিবসের জানাজা সামনে রেখে তার আত্মার শেষ কল্যাণ কামনা"


উপর্যুক্ত উপমা, উৎপ্রেক্ষা, সমাসোক্তি, অনুপ্রাস প্রভৃতি আলংকারিক উপকরণ নজরুলের নন্দনতাত্ত্বিক বৈদগ্ধতার বিভাসক। নজরুল 'শুধু উপমা দিয়ে কথা বলা নয়, চিত্র অঙ্কন করে কথা বলার একটি নতুন দিগন্ত রচনা করেছেন।


অতএব এ কথা সত্য যে,নজরুল প্রথম শ্রেণির ঔপন্যাসিক নন। কবি হিসেবেই তিনি সর্বাধিক  পরিচিতি,তাছাড়া স্বল্পসংখ্যক উপন্যাস রচনার ফলে তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবেও খুব বেশি আলোচিত নন। তবুও উপন্যাসের ভাষা, চরিত্র নির্মাণ এবং সমকালীন জীবন-ঘনিষ্ঠ বাস্তব চিত্র রূপায়নে মৃত্যুক্ষুধা স্বতন্ত্র শিল্পকর্মের মর্যাদা লাভ করেছে।বিষয়-বৈচিত্র্যের অভিনবত্বে এবং শিল্প-সুষমার সমগ্রতায় মৃত্যুক্ষুধা তাই নজরুলের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।


মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের প্লট।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের বিষয়বস্তু।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের শিল্পমূল্য।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের অলংকার।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের মেজ বউ চরিত্রটি বিশ্লেষণ কর।মৃত্যুক্ষুধা কোন ধরনের রচনা।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের প্রধান চরিত্র।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাস কাদের পটভূমিতে রচিত।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের সমালোচনা।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের নামকরণ।মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসের মূলভাব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ