'মৈমনসিংহ গীতিকা'র একটি উল্লেখযোগ্য পালা 'দেওয়ানা মদিনা'। 'দেওয়ানা মদিনা' পালাটির প্রাথমিক সংগ্রাহক হিসাবে চন্দ্রকুমার দে ও পরবর্তীতে ক্ষিতীশচন্দ্র মৌলিক এর নাম পাওয়া যায়। পালাটির সম্পাদনা করেন দীনেশচন্দ্র চন্দ্র সেন। পালাটি রচনা করেন মনসুর বয়াতী। 'দেওয়ানা মদিনা' পালাটিকে কেও কেও 'আলাল দুলালের পালা' হিসাবেও অভিহিত করেন। 'দেওয়ানা মদিনা' পালাটি কতটা শিল্প সম্মত হয়ে উঠেছে, তা বিচার বিশ্লেষণ করবার আগে আমাদের জেনে নেয়া প্রয়োজন একটি গীতিকার শিল্প সাফল্য লাভ করতে হলে কি কি গুণাবলী থাকা প্রয়োজন।
একটি সার্থক গীতিকার মধ্যে যা যা থাকে তা হলো একটি আকর্ষণীয় কাহিনী, কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, চরিত্রকে অবলম্বন করে কাহিনীর উত্থান পতন, জীবনের নানা বৈচিত্র্য দিক, নাটকীয়তা, সমাজের নানা চিত্র, নায়ক-নায়িকার প্রেম, সেই প্রেমকে কেন্দ্র করে নানা জটিলতা, ঘটনা বিন্যাসে সংযম, কাহিনীর গতিশীলতা, হৃদয় বৃত্তি, প্রকৃতি, ভাষা, শব্দ, ছন্দ, উপমা, অনুপ্রাসের সার্থক প্রয়োগ, সবকিছু মিলেই একটি গীতিকার শিল্প সাফল্য আসে। আমরা এসবের মাপকাঠিতে 'দেওয়ানা মদিনা' পালাটির শিল্প সাফল্য পর্যালোচনা করতে পারি।
দেওয়ানা মদিনা' পালাটিতে সমাজচিত্র।
'দেওয়ানা মদিনা' পালাটিতে সমাজচিত্র অঙ্কনেও কবির পারদর্শিতা আছে। কবি সমাজকে যে ভাবে দেখেছেন, ঠিক সেভাবেই তুলে ধরেছেন। কাহিনির শুরুতে দেখা যায় সোনাফর দেওয়ান, তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র আলাল, দুলালকে নিয়ে সুখী পারিবারিক জীবন যাপন করছিলেন। আকস্মিকভাবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর সোনাফর দেওয়ানের পারিবারিক জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। দ্বিতীয় বিয়ে করায় সংসারে আসে আলাল দুলালের সৎ মা। সমাজে সৎ মায়েদের ভূমিকা কত নিষ্ঠুর হতে পারে, অমানবিক হতে পারে, কবি সে চিত্র নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন।
সৎ মা জল্লাদকে জমিজমা ঘুষ দিয়ে আলাল, দুলালকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অর্থের বিনিময়ে সমাজে যে কোনো অন্যায় কাজ করানো যেতো, সমাজের সেই চিত্রটি এখানে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ইরাধর ব্যাপারী আলাল, দুলালকে ধানের বিনিময়ে সওদাগরের কাছ থেকে কিনে নেয়, এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, সমাজে তখন মানুষ কেনা বেচা প্রথা প্রচলিত ছিল।
এছাড়াও পশ্চাৎপদ কৃষকজীবনের আর একটি চিত্র পরিস্ফুট হয়েছে 'দেওয়ানা মদিনা' গাথায়। সামন্ততান্ত্রিক কৃষকজীবনের বিন্যাসে সমগ্র পরিবারের শ্রম জড়িত থাকে। কৃষি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কেবল কৃষকের শ্রমই নয়, কৃষক-বধূসহ পুত্র-কন্যা অর্থাৎ সমগ্র পরিবারই এ শ্রমের 'দেওয়ানা মদিনা' গাথায় দুলালের পাশাপাশি মদিনাকেও কৃষিকাজে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এ থেকে বুঝা যায় তখন পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও কৃষি কাজে জড়িত ছিল
"লক্ষ্মী না আগণ মাসে বাওয়ার দাওয়া মারি।
অসম মোর আনে ধান আমি ধান লাড়ি।। "
পাশাপাশি, কাহিনীর মধ্যে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আলাল পিতার দেওয়ানি উদ্ধারের পর ছোট ভাই দুলালকে যখন খুঁজে পেয়েছে, আলাল তার ছোট ভাই দুলালকে বাধ্য করেছে তার স্ত্রী মদিনাকে ভালাক দিতে। তার কারণ মদিনা কৃষক কন্য। তুলনামূলকভাবে মদিনা নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। এ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে সমাজে তখন অভিজাত, অনভিজাত, উচ্চবিত্ত-নিম্নবিত্তের ভেদাভেদ প্রকট ছিল। 'দেওয়ানা মদিনা' পালায় সমাজের নানা ছবি স্থান পেয়েছে এবং কবি অত্যন্ত শিল্প সম্মতভাবে সমাজকে রূপায়িত করেছেন।
দেওয়ানা মদিনা।দেওয়ানা মদিনা পালার রচয়িতা কে।দেওয়ানা মদিনা পালার সমাজ চিত্র। দেওয়ানা মদিনা কোন কাব্যের অন্তর্গত।দেওয়ানা মদিনার চরিত্র।দেওয়ানা মদিনা পালার চরিত্র।দেওয়ানা মদিনার নায়িকার নাম কি।দেওয়ানা মদিনা পালার মদিনার চরিত্র।ময়মনসিংহ গীতিকা দেওয়ানা মদিনা।দেওয়ানা মদিনার কাহিনী।দেওয়ানা মদিনা পালার শিল্পমূল্য। দেওয়ানা মদিনা পালার সার্থকতা বিচার কর।
0 মন্তব্যসমূহ