কঙ্কাবতী কাব্যের বিষয় ও প্রকরণ।
বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) বিংশ শতাব্দীর একজন প্রভাবশালী বাঙালি কবি ,প্রাবন্ধিক ,নাট্যকার ,কথা-সাহিত্যিক ,অনুবাদক সম্পাদক ও সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর ত্রিশোত্তর কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবদ্দশাতে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব এর বাইরে এসে যারা লেখালেখি করেছেন, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মূলত আধুনিক কবিতায় যারা পথিকৃৎ তিনি তাঁদেরই একজন। যুগ যন্ত্রণা লিবিডের অন্তরচাপ ,অস্তিত্বের প্রগাঢ় সংকট, সর্বোপরি যৌবনচেতনার ভয়ানক নৈসঙ্গবোধকেই কবি তার কবিতায় রূপ দান করেছেন।
বুদ্ধদেব বসুর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ কঙ্কাবতী (১৯৩৭) গ্রন্থটি। কাব্যটি বাংলা কাব্যধারায় এক নতুন চিন্তার সূচনা করে। এ কাব্যের কবিতা গুলোর রচনাকাল ১৯২৯-১৯৩৭ এবং এ কাব্যের প্রধান বিষয় প্রেম। তবে এখানে শারীরিক ও মানসিক প্রেমের সমন্বয় ঘটেছে। এ কাব্যে কবি সুস্থ যৌবনের যেমন দেহী বাসনায় তাঁর প্রেমিকার রূপসৌন্দর্যকে নির্মাণ করেছেন, তেমনি দেহকে অবলম্বন করেই পার হতে চেয়েছেন দেহের সীমানা থেকে অসীমতায়।এ কাব্যটিকে কবি প্রেম ও প্রকরণের সংমিশ্রণে এক অভিনব শিল্পরূপ দান করেছেন।
'কঙ্কাবতী' কাব্যের নায়িকা হচ্ছে কঙ্কাবতী। কবির এ নায়িকা আধুনিক,সে রবীন্দ্রনাথের নায়িকার মত নয়।রবীন্দ্রনাথের উর্বশী, পূনরুবা ইত্যাদি নায়িকারা নিশ্চুপ,তারা স্বর্গবাসী এবং শরীরী প্রেমের বাইরে। তিনি কবিতাই অসুন্দর,অকল্যাণকে আনেননি, অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের প্রেম একপাক্ষিক, কিন্তু আধুনিক কবিরা পঙ্কিলতা,কদর্যতার মধ্যকার সৌন্দর্যকে খুঁজেছেন।তাদের কবিতায় ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্য পঙ্কিলতা -কদর্যতা স্থান পেয়েছে। তাই তারা স্বর্গের অপ্সরীর সঙ্গে বাস্তব জগতের মানুষের প্রেমের সম্পর্ক না খুঁজে তাদের আশেপাশে নারীদের প্রেমকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তাই আধুনিক কবি বুদ্ধদেব বসুও তার শতাব্দী-প্রাচীন শায়িত ও ঘুমন্ত নায়িকা কঙ্কাবতীর মধ্যে আনলেন মানবিক রক্তমাংসের ইন্দ্রিয়- প্রত্যক্ষ বিশশতকীয় রূপবৈচিত্র্য।এ কাব্যে কবি কঙ্কাবতীকে আধুনিক পাশ্চাত্য নারীদের মতো ব্যক্তিত্বের আবরণে এঁকেছেন।
কঙ্কাবতী কাব্যে কবি বুদ্ধদেব বসুর প্রেমভাবনা তিন ভাগে বিভক্ত ।অর্থাৎ কবির ত্রয়ী প্রেম চেতনার প্রকাশ ঘটেছে।
প্রথম পর্বে প্রকাশ পেয়েছে নাগরিক মধ্যবিত্তের রোমান্টিক প্রেমচেতনা।মূলত ত্রিশের কবিরা প্রবৃত্তি ও সময়ের সংকটে নিমজ্জিত অন্তর্দহনে প্রেমের প্রশান্তিতে অবগাহন করতে চেয়েছেন। বুদ্ধদেব বসুর কবিতাও সেই নব্য নাগরিক মধ্যবিত্তের প্রেমের প্রাথমিক রোমান্টিক চেতনা ও পরিবেশ লক্ষযোগ্য। কবির এপর্বের কবিতাগুলো হচ্ছে- কাল, কোন মেয়ের প্রতি, মেয়েরা, এ-ই সব, চুম্বন,বেহায়া ইত্যাদি।
কঙ্কাবতী কাব্যেগ্রন্থের প্রথম কবিতা 'কাল' ।কবির এ নায়িকা উৎকণ্ঠিত, বিরহ-তাপিত, নায়িকার সময় অতিবাহিত হয় না আর। প্রেমিকের আগমনের মৃদু সঙ্কা নিয়ে সময় অতিবাহিত করার জন্য বড় শাস্তি যেন:
"এখন তো সবে সন্ধ্যা-সারা রাত্রি-তবে তো প্রভাত!
কাল সে আসিবে।"
(কাল,কঙ্কাবতী)
বিরহিনী রাধার মতোই তার অনুভব। কিন্তু এ নায়িকা নাগরিক তাই সে অপেক্ষায় থাকে গাড়ির শব্দের,চাকার ঘর্ঘরের, কাঠের সিঁড়িতে পদধ্বনির, নাগরিক এ নায়িকার প্রেমিক শেষ অবধি আসে না। তবুও আশা নিয়ে বেঁচে থাকে নাগরিক এ নায়িকা।
"হয়তো বা আসিবে সে কাল"
(কখনো,কঙ্কাবতী)
এ পর্যায়ের কবিতাগুলোই বুদ্ধদেব বসুর নারী সম্পর্কিত রোমান্টিক ভাব কল্পনার পরিচয় আছে,আছে নারীসঙ্গ কামনার অবদমনের পেষণ এবং এই অর্থে অধিকতর ইন্দ্রিয়ঘনত্ব। আসলে এ পর্বে কবি ভয়াল নৈঃসঙ্গে নিপতিত হয়েই নারীর দেহী বাসনাকে প্রত্যক্ষগ্রাহ্য করেছেন। -
"গা ঘেঁষে মেয়েরা চলে, কথা কয় ঢেউয়ের ভাষায়, ছোঁয় কি না ছোঁয় মোর ছায়া!
যে-হাওয়া ছুঁয়েছে তারা, সেই হাওয়া ঝরে মোর গায়,
বিছায় সুরভি-ঘন মায়া।"
(মেয়েরা:)
আবার 'কোনো মেয়ের প্রতি' কবিতায় নাগরিক মধ্যবিত্তের রোমাটিক প্রেমচেতনার পরিবেশ
"টবেতে ফুলের চারা তোমাদের বড়ির সিঁড়িতে
….
সিঁড়ির সমুখে ঘর, ছোটো ঘর, ঠান্ডা, পরিষ্কার, শেলাই-কলের কাছে ছোটো টুলে রয়েছো বসিয়া।"
(কোনো মেয়ের প্রতি)
দ্বিতীয় পর্বের কবিতায় কবি মনকে নয় শরীরকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। প্রাচ্য লোকনায়িকা কঙ্কাবতীকে বহু শতব্দী-প্রাচীন মৃত প্রেম ও সৌন্দর্য থেকে তুলে এনে নবরূপে ও চেতনায় প্রতিস্থাপন করেছেন। কবির এ নায়িকা আবহমান বংলা কাব্যের দেহ অস্বীকৃত রেমান্টিক উর্ধ্বমুখী প্রেম চেতনার বিপরীতে পাশ্চাত্য রূপ- সৌন্দর্যে নির্মিত। রূপকথার কথার জগতের ঘুমন্ত কঙ্কাকে যেন অবদমনের ঘুম থেকে জাগাতে চান,ফ্রয়েড সচেতন এই কবি। অর্থাৎ ভারতীয় প্রেমচেতনার আর্কিটাইপকে কবি নবাঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন। এ পর্বের কবিতাগুলো হচ্ছে -আরশী, সেরেনাদ,কঙ্কাবতী,কবিতা ইত্যাদি।
মূলত এ পর্বে কবি কঙ্কাতীকে ধুলো-ধূসরতা থেকে তুলে এনে পাশ্চাত্য নারীর রূপদান করেছেন। -যেমন
"আরশির মুখে ছোট দুটি ঠোট -আপেল পাকা
আরশির বুকে বাঁকা রেখা বুক-বুকের পাখা।
"
কঙ্কাবতী সে চুল এলো করে দিয়েছে-
আহা লাল চুল,রেশমি-নরম,লাল সে চুল!"
(আরশি)
অর্থাৎ আরশিতে প্রতিফলিত কঙ্কার এরূপ কবি চেতনায় রূপান্তরিত পাশ্চাত্য নারীকল্প এবং আরশি হয়ে উঠেছে কবিচৈতন্যের প্রতিরূপক। আরশির এ নায়িকাকে পাশ্চাত্য বৈশিষ্ট্য দিয়ে তার অবদমিত প্রেমকে জাগিয়েছেন।
আবার সেরেনাদ কবিতায় কবি ইতালীয় প্রেমিক গোষ্ঠীর রূপকল্প ও আবহ নিয়ে উপস্থিত প্রাচ্য নায়িকা কঙ্কার জানালার শিয়চর। মূলত আমাদের সংকুচিত বাঙালি নারীকে কবি জাগাতে চেয়েছেন।
"হাহাকার করে বেহায়া হাওয়ার বেহালাখানি,
……
কোন কথা কয়? তুমি কি শুনবে? শুনবে না কি? আধো বিস্ময় আধো সংশয়ে মেলবে আঁখি?
কঙ্কা, জাগো।"
(সেরেনাদ)
আবার" কঙ্কাবতী কাব্যের নাম কবিতা কঙ্কাবতীতে কবি সবত্র কঙ্কাবতী নামের অনুরণন অনুভব করেন। এখানে কবি রোমান্টিক আবেগের সঙ্গে যুক্ত করেছেন কোলাহলপূর্ণ পৃথিবার বাস্তর পরিপ্রেক্ষিতকে।
"তোমার নামের শব্দ আমার কানে আর প্রাণে গানের মতো-
মর্মের মাঝে মর্মরি কাজে,কঙ্কা! কঙ্কা! কঙ্কাবতী।
(কঙ্কাবতী)
অন্যদিকে'কবিতা' কবিতায় যুক্ত হয়েছে হোমারের 'ইলিয়ডয়" এবং রসোটির-ট্রয়টাউন, এর সঙ্গে কবির নিজস্ব প্রেমভাবনা। এ কবিতায় হেলেনের দেহ সৌষ্ঠবের বিশেষত সুডৌল বক্ষসৌন্দর্যের বর্ণনাংশ কবিকে তার প্রেমিকার সৌন্দর্য বর্ণনায় উন্মুখ করেছে।
'কঙ্কাবতী' কাব্যে বুদ্ধদের বসুর প্রেম চেতনার রূপান্তর লক্ষ্য করা যায় তাঁর তৃতীয় ধরার কবিতাগুলোতে।
এপর্বের কবিতা 'অমিতা ও রমা,কিছুই প্রেমের মত নয়,হে ঈশ্বর এ কী অপরূপ,ক্ষমাপ্রার্থনা, বিবাহ ইত্যাদি।
এ পর্বে এসে তিনি বুঝতে পারেন শরীরী প্রেম প্রধান নয়। প্রেমের পূর্ণতা পায় দেহাতীত প্রেমে। তাই দেহের মাধ্যমে তিনি দেহাতীত প্রেম পৌঁছতে চেয়েছেন। অতৃপ্ত দেহমুখী প্রেমের সীমকে অতিক্রম করে অসীম চিরন্তন প্রেমের সন্ধান করেছেন কবি। বেদলেয়ারের ''ক্লেদজ কুসুমে' থেকে শুদ্ধ হতে চেয়েছেন।-
"হে ঈশ্বর, এ কী অপরূপ!
আত্মার অসীম তৃষ্ণা, অথবা এ রক্তের পিপাসা-
বুঝিতে পারি না আমি।... বক্ষে তাকে জড়ায়ে যখন সমস্ত অধর তার নির্মম চুম্বনে করি পান—
তবু কই তৃষ্ণা মেটে, তবু মোর তৃষ্ণা মেটে কই?"
(হে ঈশ্বর এ কী অপরূপ)
কঙ্কাবতী কাব্যে কবির প্রেমবোধের এই ত্রয়ী বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঈশ্বরচেতনা, নিসর্গচেতনা,কালচেতনা ইত্যাদি।প্রথমদিকে কবি প্রেমের শাশ্বত রূপেই বিশ্বাসী ছিলেন। ক্রমে সেখান থেকে তিনি দেহবাদী প্রেমের দিকে এসেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আবার শাশ্বত প্রেমের কথাই বলেছেন। ড. সৌমিত্র শেখর লিখেছেনঃ -
"দেহ ও মনের সমি্মলিত অনুধাবনে বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় প্রেমাকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত। নগ্নতা তাঁর কবিতায় নেই"
কঙ্কাবতী কাব্য সম্পর্কে তিনি আরও লিখেছেনঃ
"এখানে শারীরিক ও মানসিক প্রেমের সমন্বয় ঘটেছে।"
এ কাব্যের কবিতাগুলোতে বিভিন্ন ভাষার অভিনব শব্দের ব্যবহার লক্ষনীয়। দেশজ-কথ্য- চলতি আটপৌরে শব্দের সঙ্গে আরবি, ফারসি- শব্দের স্বতষ্ফূর্ত ব্যবহার করেছেন। যেমন:
বসিবো,মায়ের মেজাজ চড়া,শিশুগুলি ইত্যাদি সাধু ও চলিতের মিশ্রণজনিত আটপৌরে ভাষা।এছাড়াও:
একটু সময় হবে? পাশে গিয়ে বসিবো তোমার।
(কোনো মেয়ের প্রতি কঙ্কাবতী)
"শব্দের পৌনঃপুনিক ব্যবহার " আকাঁবাঁকা জল, একা বাঁকা চাঁদ, আকাশ ফাঁকা।'
(কঙ্কাবতী)
নাসিক্য ধ্বনির বহু-ব্যবহারের মাধ্যমে এখানে সুর বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন বুদ্ধদের বসু।
এছাড়াও সমাসবদ্ধ শব্দ, সধু-চলিতের মিশ্র শব্দ, অর্ধ-তৎসম(জ্যোছনা),বিশেষণবাচক শব্দ (আঁধার ধরণী,নিঝুম যামিনী), সম্বোধন পদ ইত্যাদির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।প্রেমের ঘণত্ব নির্মাণে- মনের ভাব প্রকাশে, প্রগাঢ় শরীরী নৈকট্য স্থাপনের অভিপ্রায়ে -বজ্র, মেঘ, মাতাল বাতাস,এলানো চুল,নীল আলো,ঘুমন্ত আকাশ, বিদ্যুৎ,সাপ ইত্যাদি প্রতীকী শব্দের ব্যবহার করেছেন।
বুদ্ধদেব বসুর প্রধান সাধনা ছিল বাকছন্দের সঙ্গে কাব্য ছন্দের মিলন ঘটানো। কথ্যরীতির সঙ্গে কাব্যরীতির মেলবন্ধন তাঁর মাত্রাপ্রধান ছন্দেও দেখা যায়। তাঁর 'কঙ্কাবতী'তে অধিকাংশ ছন্দেরই মূল সংকেত ৬+৬+৫।
রাতের বাতাসে/কী কথা যে কয়/পাতার কানে
রাতের তারার/সেই কথা জানে/সে কথা জানে
(সেরেনাদ)
তাছাড়া তাঁর কোনো কোনো কবিতার কিছু অংশ নিতান্তই সরল পদ্য মনে হয়।-
'আমার কথন শোনো যদি,বলতে পারি তাই,
প্রেমের মতো জীবনে আর বিড়ম্বনা নাই'
(সদুপদেশ)
"কঙ্কাবতী", কাব্যে বুদ্ধদেব বসুর প্রাকরণিক বৈশিষ্ট্য অতি উজ্বল। বর্ণনাত্মক ভাষারীতি, আবেগময় শব্দ ও শব্দালংকার ব্যবহারে ধ্বনিসুষমা সৃষ্টি করেছেন।
যেমন:
পুনরাবৃত্তময়, ধ্বন্যাত্মক ও অনুপ্রাস শব্দের ব্যবহার-
"দিনের কাজের হাজার আওয়াজ হাজার হাওয়ার জোয়ারে বহে"
(কঙ্কাবতী : কঙ্কাবতী)
"হৃৎশব্দের তালে তাল রেখে টিপ টিপ টিপ গান গেয়ে যায়।"
(কঙ্কাবতী : কঙ্কাবতী)
."উত্তল বাতাস, মাতাল বাতাস, রাতের বাতাস
বাতাসের ভাষা শুনবে পাতারা, শুনবে আকাশ"
(কবিতা : কঙ্কাবতী)
পাশাপাশি উপমা, প্রতীক,সমাসোক্তি,অন্যাসক্তি,বিরোধাভাস ইতাদি অলংকারের ব্যবহারে কাব্যটি চমৎকার রূপলাভ করেছে।
সমাসোক্তি:
"শরীর শুয়েছে মাতাল বাতাসে মন উধাও"
"বেহালা বলিছে আজিকার রাত প্রভাত হবে"
(সেরেনাদ : কঙ্কাবতী)
অন্যাসক্ত অলঙ্কার:
উতল বাতাস, মাতাল বাতাস, রাতের বাতাস (কবিতা: কঙ্কাবতী)
একই বাক্যে অন্যাসক্ত ও সমাসোক্তির যুগপৎ ব্যবহার:
"বেহায়া বেহালা কী কথা যে বলে, শুনতে পাও?"
(সেরেনাদ)
বিরোধাভাস
স্বর্গে মোর কিবা কাজ,পৃথিবীরে কেন বা চাহিবো?
(কখনো)
কঙ্কাবতী কাব্যের বড় বৈশিষ্ট্য এর করণকুশলতা বিশেষ করে উপমার মালা নির্মাণ। যার অনেকগুলো কাব্যে অতিরিক্ত ব্যন্জনা এনেছে।
"মেঘের মতন শড়ির আঁচল"
নৌকোর মতো আধখানা চাঁদ"(কবিতা)
কখনো কখনো আবার উপমার পর উপমা সাজিয়ে নির্মাণ কারছেন চিত্রকল্পেরর সৌধ।
'পাতার মতন পীত স্মৃতিগুলি যেন এলোমেনো প্রেতের মতো"
"কঙ্কাবতী"
প্রতীক: 'বেহায়া বেহালা কি কথা বলে শুনতে পাও'
(সেরেনাদ)
এ কাব্যে কবি রূপকথা,পুরাণ ইত্যাদি ব্যবহার করলেও তিনি অতীতচারী হয়ে যান নি।এ কাব্যের নামকরণেও তিনি সুস্পষ্ট পুরানপ্রয়োগ করেছেন।এছাড়াও বায়ুদেবতা,কামদেবতা,হেলেন,ভেনাস,আফ্রেদিতি,প্রভৃতি পাশ্চাত্য পৌরাণিক চরিত্রের উপস্থিতি দেখা যায়।গ্রিক ও রোমান পুরা-অনুষঙ্গের ব্যবহারে তার দক্ষতার পরিচয় দেয়।
অবশেষে পাঠকের মনে হয়,'কঙ্কাবতী' কাব্য বুদ্ধদেব বসুর নবতর প্রেমবোধের উত্তরণ, তিনি দেহনির্ভর প্রেম থেকে মানসিক প্রেমের কথা বলেছেন,আবার দেহ গুরুত্বহীন হয়ে যায়নি তার কাছে।আসলে কবিহৃদয়ে দ্বন্দ্ব ছিল,যা থেকে তিনি তার পথ বেছে নিয়েছেন।সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধদেব বসু কঙ্কাবতী কাব্যটি প্রাকরণিক বৈশিষ্ট্যে অনন্য হয়ে উঠেছে।
কঙ্কাবতী কাব্যের আঙ্গিক/গঠনকৌশল।
0 মন্তব্যসমূহ